সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
মেহেরপুর জেলা কর্ণধার কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে মেহেরপুরে পাঁচ দফা দাবিতে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের শিক্ষকদের মানববন্ধন মেহেরপুরে কাল বৈশাখীর হানা,  ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি কৃষি ও প্রবাসী আয়ই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড – মনির হায়দার এনসিপির যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’র আত্মপ্রকাশ বিপ্লবের পর আশাবাদের বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন নেই ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ: পাকিস্তানের প্রশংসা করে যা বলল চীন আকাশে খুলে গেল চাকা, যাত্রী নিয়ে শাহজালালে নিরাপদে অবতরণ বিমানের মসজিদ-মাদরাসাসহ ৩৫০ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিলো ভারত যৌক্তিক দাবি মেনে নিলে ২ মিনিটে ক্যাম্পাসে ফিরবো: শিক্ষক সমিতির সম্পাদক

পাল্টে যাচ্ছে জামায়াতের কৌশল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করছেন তারা। তবে দলের চিরচরিত ভোটের কৌশল পাল্টে এবার নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছে দলটি।

আসনভিত্তিক, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয়ভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন নেতারা। জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে আগামী নির্বাচন করার জন্য দলটির পক্ষ থেকে আহ্বানও জানানো হচ্ছে। ভোট ব্যাংক বাড়াতে জামায়াতের নতুন এ কৌশল ইতোমধ্যে সাড়াজাগিয়েছে। দলটি স্থানীয় পর্যায়ে দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের অভাব অভিযোগের সুরহা করছে।

অন্যায় অত্যাচার নিপীড়নের শিকার অসহায় মানুষরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় ছুটে যাচ্ছে জামায়াতের নেতাদের কাছে। প্রত্যাশিত সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে তাদের অনেকেই ক্রমেই জামায়াতে ইসলামীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোটের মাঠে জামায়াতের সমর্থন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী। 

জামায়াতের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় স্পষ্ট যে, দলটির মূল লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা।

সেজন্য এখন থেকে মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নানান দলীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মাবলম্বী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন দলটির নেতারা। করছেন মতবিনিময় সভা ও সমাবেশ। তাদের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি পটুয়াখালীর বাউফলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরসহ আসনভিত্তিক, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও সমাবেশ করে আসছে দলটি। 

পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে জামায়াতের ব্যানারে অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে প্রার্থী খুঁজছে জামায়াত। নেতারা জানান, জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে শুধু মুসলিমরা নির্বাচন করবে তা নয়, জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে সমাজের যে কোনো সৎ, যোগ্য, আদর্শবান, চরিত্রবান, দেশপ্রেমিক নাগরিক নির্বাচন করতে পারবে। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, রাষ্ট্র পরিচালনের জন্য সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। এ বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে অমুসলিমদের প্রার্থী মনোনয়ন দিতে দলের পক্ষ থেকে ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে। আমাদের পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে যদি সৎ যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় তাহলে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমরা খোঁজ তাদের করছি।

এদিকে গত বুধবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউশনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে প্রীতি সমাবেশ করে দলটি। সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। মুসলিম, অমুসলিম সবাই নিজ নিজ ধর্মীয় অধিকার পালন করার সুযোগ পাবেন। আমরা এই সংগ্রাম করছি, চেষ্টা করছি একটি মানবিক কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। যেখানে সবার জান-মাল, ইজ্জত, উপাসনালয় সবকিছুর নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারব।

তিনি আরও বলেন, আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই, আধুনিক সুন্দর সমৃদ্ধপূর্ণ ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে চাই। দেশ, মানুষ, দল-মত, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলেই আমাদের এই প্রিয় দেশটাকে আমরা আগামী দিনে সুন্দরভাবে সাজাব।

ওই প্রীতি সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত এই প্রীতি সমাবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়োজন শুধু প্রীতি নয়, সম্প্রীতির বন্ধন। জামায়াতে ইসলামী তাদের নেতৃত্ব নীরবে-নির্বিঘ্নে জনগণের দোড়গোরায় পৌঁছে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে মানবিক গুণের চিত্র ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, ডা. শফিকুর রহমান একজন মানবিক নেতা হিসেবে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি সব ধর্মের মানুষের কাছে বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হিসেবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ নিয়ে কেউ যাতে অপপ্রচার চালাতে না পারে সেজন্য তিনি সব মানুষকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, অধিকারের কথা সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা যেই স্বপ্ন দেখেছি, বৈষম্যের অবসান ঘটবে। তিনি বলেন, বিগত ৮ মাসে সেই স্বপ্নের আশার আলো বেশি দূর দেখা যায়নি। তবে জামায়াতে ইসলামী আমাদেরকে অভয় দিয়েছে, অনুপ্রাণিত করেছে। যখন সরকারবিহীন রাষ্ট্রে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ছিলাম তখন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতারা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে আমাদেরকে সাহস যুগিয়েছেন। আমাদের পাশে ছায়ার মতো দাঁড়িয়েছেন। যার জন্য জামায়াতে ইসলামীর প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দ্বীন বন্ধু রায় বলেন, জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী কোনো দল হিন্দুদের বাড়ি-ঘর দখল করেনি। বরং যারা হিন্দুদের পক্ষের লোক দাবি করে তারাই হিন্দুদের সম্পদ দখল করে বসে আছে। তাদের কাছেই হিন্দুরা নিরাপত্তাহীন ছিল। ইমান্যুয়েল ব্যাপ্টিস্ট চার্চ পাস্তর তনান রায় বলেন, ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, যেই ব্যক্তি কোনো ভিন্ন ধর্মের লোককে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বছরের দূরত্ব পর্যন্ত ছড়ায়। তাই বলা যায়, ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান নাই। তিনি আরও বলেন, ইসলামী শিক্ষায় জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্ব দিচ্ছে। যার কারণে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের দ্বারা কোনো অমুসলিম নির্যাতিত হয়নি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা জামায়াতে ইসলামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই আমাদের দুটি বড় উৎসব সামনে আসে, জন্মাষ্টমী এবং দুর্গাপূজা। ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত যখন দেশে কোনো সরকার ছিল না তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা আমাদের ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত অনেক পূজা মণ্ডপে বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবারই দুর্গাপূজায় সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেখানে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল অনুপম বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম ধর্মগুরু স্বরূপানন্দ ভিক্ষু, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নেতা রিকন কোমল বড়ুয়া, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুভাশীষ বিশ্বাস, সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি নিভাষ চন্দ্র মাঝিসহ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের বিভিন্ন নেতারা।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024