সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:১৭ অপরাহ্ন
পুলিশের এই অভিযান প্রথমে আহমেদাবাদ ও সুরাতে শুরু হলেও দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। নথিপত্র যাচাইয়ের কাজ চললেও অভিযোগ উঠেছে, অনেক ভারতীয় নাগরিক—বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা, ও মহারাষ্ট্র থেকে আগত বাংলাভাষী মুসলমানদেরও ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে বেআইনিভাবে আটক করা হচ্ছে।
সুরাতের বাসিন্দা সাহিনা বিবি অভিযোগ করেন, তার স্বামী সুলতান মল্লিক ও দুই ভাগ্নেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। যদিও মল্লিকের পাসপোর্ট ও ১৯৯৩ সালের জমির দলিলে তার পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ রয়েছে। সাহিনা জানান, “ওরা বলেছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দেবে, কিন্তু তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো খোঁজ নেই।”
এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। আহমেদাবাদে একটি বিয়েবাড়িতে বরযাত্রীদেরও পুলিশ ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করে। বিয়ের কার্ড, আধার কার্ড, জন্ম শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরবর্তীতে নথিপত্র জমা দেওয়ার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ বলছে, শুধুমাত্র গুজরাট নয়—উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা ও মহারাষ্ট্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সংগঠনটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক বলেন, “গত কয়েকদিনে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে আমাদের হেল্পলাইনে। এসব অভিযোগে বাংলাভাষী মুসলমানদের শুধু ভাষা বা ধর্মের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশি’ বলে হেনস্থা করা হচ্ছে।”
ফারুক আরও জানান, আটক ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নিয়ম থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। তার অভিযোগ, “২০১৪ সাল থেকে এই প্রবণতা বাড়ছে। পহেলগামে এক মুসলিম শ্রমিক হত্যার পর এই ধরপাকড় আরও বেড়েছে।”
১৮ই এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে পশ্চিমবঙ্গের মালদার ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে বাংলায় কথা বলার কারণে স্থানীয়রা ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করে মারধর করে। পরে পুলিশ তাদের আটক করে, যদিও একদিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
‘বাংলাভাষী মুসলমান’ মানেই বাংলাদেশি?
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে কারো নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ তোলা কতটা যুক্তিসঙ্গত? আসিফ ফারুক প্রশ্ন তোলেন, “বাংলাভাষী মুসলমানদের কি আর ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যে কাজ বা ব্যবসা করার অধিকার নেই?”
গুজরাট পুলিশ জানিয়েছে, সীমান্ত লাগোয়া রাজ্য—পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় থেকে পুলিশের বিশেষ দল আনা হচ্ছে জমা দেওয়া নথিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে। পুলিশের মতে, আধার ও ভোটার কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বানানো হতে পারে, তাই সরেজমিনে যাচাই করা হচ্ছে।
গুজরাটে পুলিশি অভিযানের ফলে প্রকৃত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্তকরণ সম্ভব হলেও, একই সঙ্গে প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক, বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের বেআইনিভাবে আটক ও হেনস্থার অভিযোগ ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এ ধরনের অভিযান নাগরিক অধিকার, মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা