সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

তৌহিদ আফ্রিদির তিন ডিভাইসে মিলেছে ভয়ংকর তথ্য!

হত্যা মামলার আসামি কনটেন্ট ক্রিয়েটর ‘ব্যাডবয়’ তৌহিদ আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর বেপরোয়া ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় এখন রিমান্ডে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। সেই সঙ্গে তার কাছ থেকে জব্দ করা তিনটি ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। এসব ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী অনেক ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মিলছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান বলেন, তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, হার্ডডিস্ক ও ম্যাকবুক (তিনটি ডিভাইস) জব্দ করা হয়েছে। এসব ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আপাতত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রোসিকিউটর মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, আসামি তৌহিদ লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের নারকীয় হত্যা করতে উৎসাহিত করেন। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডিভাইসে অবশ্যই ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ আছে। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষা করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ষড়যন্ত্র, কার কী ভূমিকা এবং আন্দোলন দমনে কী ধরনের যোগসাজশ ছিল তা জানা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উদ্ধার হওয়া ডিভাইসগুলোতে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে। এসব চ্যাটে আন্দোলনের সময় কোথায় কিভাবে আন্দোলন দমন করা করা, সেইসব পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে। এর আগে রবিবার রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, আসামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে একজন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং মাই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ২৪ জুলাইয়ে স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে তিনি সেলিব্রিটি ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর দিয়ে আন্দোলন বন্ধের জন্য প্ররোচিত করেছেন এবং যারা দ্বিমত পোষণ করেছেন, তাদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এবং ওই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্র-জনতার দাবি উপেক্ষা করে আন্দোলনবিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ জোগান। আসামির উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণে মামলার ভিকটিম আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করেন বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলার প্রকৃত ঘটনা, অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দিন ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। এর আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৮ আগস্ট এই মামলায় তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved Meherpur Sangbad © 2025