মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রস্তাবিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হলে এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে তাদের বেতন। এতে আনন্দে ভাসবে সরকারি চাকরিজীবীদের পরিবার, তবে বিপাকে পড়বে দেশের সাধারণ জনগণ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়িয়ে দেবে চাপ।
সূত্রমতে, নতুন কাঠামোতে ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হতে পারে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন এক লাফে দ্বিগুণ হবে। সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ নতুন স্কেলের আওতায় পড়বে প্রায় ২২ লাখ পরিবার।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তে সরকারের ব্যয় যেমন বাড়বে, তেমনি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। কারণ সরকারি খাতে বেতন বাড়ার প্রভাব পড়বে বাজারে—বাড়বে দ্রব্যমূল্যের চাপ। ফলে প্রায় চার কোটি বেসরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবার পড়বেন চরম ভোগান্তিতে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ছয় কোটি মানুষ কর্মসংস্থানে যুক্ত। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ কাজ করেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাদের আয়ের সঙ্গে বাজারদর সামঞ্জস্য না থাকায় জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
নতুন পে-স্কেল কার্যকর হলে সরকার যেমন বাড়তি অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়বে, তেমনি বাড়বে রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনাও। কারণ বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়কর ও সরকারি আবাসনের ভাড়ার হারও সমন্বয় করা হবে। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ আয়করের আওতায় আসবেন। সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬ হাজার টাকার বেশি হতে পারে, যা আয়কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা তৈরি করবে নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের জন্যও।
সংবাদমাধ্যমকে জাতীয় পে কমিশনের সভাপতি ও সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান বলেন, “আমাদের হাতে সীমিত সম্পদ আছে। তার মধ্যেই সর্বোচ্চ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে সরকারের ওপর কিছু বাড়তি চাপ পড়বে ঠিকই, তবে রাজস্ব আয়ও বাড়বে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়লেও বাজারে দ্রব্যমূল্যের ওপর তার প্রভাব পড়বে তাৎক্ষণিকভাবে। এতে সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য শ্রেণির মানুষের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।
সর্বোপরি, নতুন বেতন কাঠামো সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনে স্বস্তি আনলেও সাধারণ জনগণের জীবনে আনবে নতুন আর্থিক চাপ। এক শ্রেণির আনন্দের বিপরীতে অন্য শ্রেণির জন্য শুরু হতে পারে টিকে থাকার সংগ্রাম।