শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মাদ আবদুল মতিন: অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত রঙিন নারী বিজ্ঞানীদের সম্মাননা অনুষ্ঠান ২০২৫-এ বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিভাগে ফাইনালিস্ট হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেধাবী গবেষক ড. নিতু সাঈদ।
এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত ক্ষেত্রে নারীদের উদ্ভাবনী অবদান, নেতৃত্ব এবং অধ্যবসায়কে স্বীকৃতি দেয়—বিশেষ করে সেই নারীদের, যারা সাংস্কৃতিক ও বর্ণগত বৈচিত্র্যের সীমা পেরিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে কাজ করে যাচ্ছেন।
গত ৬ অক্টোবর মেলবোর্নের লিপার ফ্যামিলি প্যাভিলিয়ন, আর্টস সেন্টার মেলবোর্নে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন ড. নিতু সাঈদ।
বর্তমানে তিনি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গবেষণা সহযোগী হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক উপাদান প্রকৌশলে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর একাডেমিক যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে, যেখানে তিনি তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
ড. সাঈদ অর্জন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ম্যাকেনজি পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ (২০২২–২০২৫)। তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্র হলো শক্তি-দক্ষ ন্যানোইলেকট্রনিক্স, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও আলোক-ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি—যেখানে তিনি নতুন প্রজন্মের টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
তাঁর উদ্ভাবনী গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোতে। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ান প্রকৌশলীদের সংগঠন তাঁকে “অস্ট্রেলিয়ার সর্বাধিক উদ্ভাবনী প্রকৌশলী”দের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একই সঙ্গে এসবিএস সংবাদমাধ্যম ও ক্রিয়েট ম্যাগাজিন তাঁর বৈজ্ঞানিক অবদান ও টেকসই প্রযুক্তিতে সাফল্য নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ড. নিতুর গবেষণা ভবিষ্যতের পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, নমনীয় ইলেকট্রনিকস এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তাঁর লক্ষ্য হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবজীবনকে আরও টেকসই, নিরাপদ ও উদ্ভাবনী করে তোলা।
এর আগে ২০২০ সালে ইঞ্জিনিয়ার ড. নিতু সাঈদ অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ত্রিশজন উদ্ভাবনী প্রকৌশলীর তালিকায় স্থান পেয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত হন।
ড. নিতু সাঈদ আজ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত—যিনি প্রমাণ করেছেন, আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে যে কেউ বিশ্বমঞ্চে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। তাঁর অর্জন শুধু বাংলাদেশি নারীদের নয়, সমগ্র বিশ্বের নারী বিজ্ঞানীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা।