মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন

আমরা তেলা মাথায় তেল দেব না: জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‌‘আমরা ইনশাল্লাহ তেলা মাথায় তেল দেব না। তেলের অভাবে যার চামড়া ফেটে গেছে তার গায়ে একটু তেল মালিশ করবো ইনশাল্লাহ।’

আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ওপেন হার্ট সার্জারির পর এই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে কথা বললেন জামায়াত আমির।

নিজের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জামায়াত আমির বলেন, ‘ডাক্তারকে বললাম, যে চিকিৎসা আপনি আমাকে দেবেন, সে চিকিৎসা মেহেরবানি করে সাধারণ রোগীদেরও দেবেন। আমাকে দেখতে আসলেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং এমডি। আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে বললাম, টাকা বাঁচানোর জন্য আমি বাংলাদেশে চিকিৎসা নিচ্ছি না। আপনার প্রতি আমার অনুরোধ, আমাকে কোনো ডিসকাউন্ট দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আমাকে কোনো ডিসকাউন্ট দিলে আমি গ্রহণ করবো না। চিকিৎসক হিসেবে, রাজনীতিক হিসেবে, সমাজের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে আমাকে যদি ডিসকাউন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেন, তার প্রতিবাদে আমাকে যেটা দেবেন তারও বিল দিয়ে দেব। হ্যাঁ ডিসকাউন্ট যদি দিতেই হয়, যাদের আর্থিক কষ্ট আছে তাদের দিন।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাংলাদেশে চিকিৎসা নেওয়াটা ছিল, যারা অল্প কিছুই হলেই, হাঁচি-কাশি হলেই বিদেশ দৌঁড় দেয়, তাদের সেই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ। কেন যাবেন? বিশেষ করে রাজনৈতিক মহলের বন্ধুদেরকে বলবো, যে চিকিৎসা বাংলাদেশে একেবারেই নেই বা পাওয়া যায় না, তার জন্য যান আমার কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু যে চিকিৎসা বাংলাদেশে আছে তার জন্য যাওয়া উচিত নয়। আপনি দেশ বদলাবেন, জাতিকে সোনালী স্বপ্ন দেখাবেন, আগামী সোনার বাংলা গড়বেন, আর দেশ এবং দেশের চিকিৎসা নেবেন না, বন্ধু আমি আপনাকে সমর্থন করি না।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘আপনি যেদিন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে এই দেশে চিকিৎসা নেবেন সেদিন আপনি উপলব্ধি করবেন, আমাদের চিকিৎসার কোথায় কোথায় ফাঁকফোঁকড় ও ঘাটতি রয়েছে। তখনই কেবল এই চিকিৎসা ব্যবস্থার মানে পরিবর্তন আসা সম্ভব। জানি না আমি কতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি। কিন্তু আমি এ বিষয়গুলো বোঝার, জানার, শেখার চেষ্টা করেছি। গ্যাপ কোথায় এ কথা আপনাদের বলবো না। যাদের বলার তাদের বলে এসেছি। এই চিকিৎসা আমাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, শুধু বিশেষায়িত হাসপাতালে নয়, আপনাদের সাধারণ হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে হবে, সমস্যা বুঝতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে এবং তা সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটা মানবিক, দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। যেই বাংলাদেশে গরিব থেকে ধনী সবার অধিকার তার ঘরে, তার হাতে তুলে দেওয়া হবে। অধিকারের জন্য কারও কাছে করুনা প্রার্থী হতে হবে না।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা যদি সবার জন্য নিশ্চিত হতো, তাহলে একজন রোগীও এই ক্যাম্পে আসতেন না। সবার সুস্থ, পরিপক্ক ইমান ও গভীর দেশ প্রেম থাক এটা প্রত্যাশা করি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের কথা দিচ্ছি, এই সমাজ বদলানোর দায়িত্ব আপনারা যদি আমাদের হাতে তুলে দেন, দেশবাসী যদি আল্লাহর মেহেরবানিতে তুলে দেন, আমরা খেটেখুটে চেষ্টা করবো, সমাজের এই ঘাটতিগুলো পূরণ করার।  আমরা ইনশাল্লাহ তেলা মাথায় তেল দেব না। তেলের অভাবে যার চামড়া ফেটে গেছে তার গায়ে একটু তেল মারিশ করবো ইনশাল্লাহ।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের প্রধান বিষয় হলো, যারা বঞ্চিত মানুষ। শুধু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নয়। শিক্ষা স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে যতগুলো পরিষবা আছে, সব পরিষেবায় বঞ্চিতরা অগ্রাধিকার পাবে ইনশাল্লাহ।  বঞ্চিতদের অধিকার তাদের হাতে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত ওই সেবা আমরা গ্রহণ করবো না।’

তিনি বলেন, ‘আমার সাত মিনিটের বক্তব্যে বলেছিলাম, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। এর ছোট্ট নমুনা হিসেবে লাখো জনতা ও কোটি মানুষের সামনে এই ঘোষণা দিচ্ছি, আগামীতে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী থেকে যারা নির্বাচিত হবে তারা সরকারের কোনো প্লট স্বল্প মূল্যে গ্রহণ করবেন না। বিনা ট্যাক্সের গাড়ি চড়বেন না। সরকারের দেওয়া ন্যায্য যেসব সুযোগ সুবিধা আছে, তার কতটুকু না নিয়ে পারা যায়, তাও আমরা বিবেচনা করবো।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved Meherpur Sangbad © 2025