শনিবার, ২১ Jun ২০২৫, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তানে পানি বন্ধ করলে ভারতের পানি বন্ধ করতে পারে চীন

ভারত যদি পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত নদীর পানি আটকে দেয়, তাহলে চীনও ব্রহ্মপুত্র নদে ভারতের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে—এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। শনিবার (২৪ মে) পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (পিআইআইএ) আয়োজিত ‘পাকিস্তান-ভারত সংঘাত’ বিষয়ক এক আলোচনায় এ কৌশলগত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়। খবর ডনের।

পিআইআইএ-এর চেয়ারপারসন ড. মাসুমা হাসান জানান, সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে বিভিন্ন মতামত, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি জানা জরুরি ছিল। তাই, তারা তাদের গবেষণা সহকারীদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করার জন্য আহ্বান করেছেন।

ড. মাসুমা গত এক মাসের ঘটনাবলি তুলে ধরে স্মরণ করিয়ে দেন যে, কীভাবে ভারত কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই ২২ এপ্রিলের পেহেলগাম হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল, যা ছিল ভারতের গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এরপর তিনি বলেন, ‘ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে এবং পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত করে।’

মাসুমা হাসান আরও উল্লেখ করেন, ‘৭ মে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে। দেশকে খুব ভালোভাবে রক্ষা করার সময় পাকিস্তান ১০ মে প্রতিশোধ নেয়, যা পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি হয়।’

পানিসম্পদ ও কৌশলগত হুমকি

গবেষণা সহকারী মোহাম্মদ উসমান ‘পানিসম্পদ ও সম্পদ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানে জলপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাদের নিজস্ব উচ্চভূমি প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। তবে, ‘যদি তারা শুষ্ক মৌসুমে আমাদের পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে এটি আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। কারণ পানি প্রবাহ কম এবং মজুদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের কৃষকদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ফলন কম হতে পারে।’

উসমান আরও বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানের পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে এর জন্য উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে, যা তৈরি করতে বছরের পর বছর সময় লাগবে এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারও খরচ হবে। তিনি ‘পানির অস্ত্রায়ন’ বা ‘জল বোমা’ ধারণার ব্যাখ্যা দেন, যেখানে উজানের দেশ পানির প্রবাহ আটকে রাখে, তারপর হঠাৎ করে ভাটির দেশকে না জানিয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি ছেড়ে দেয়, যার ফলে বড় বন্যা দেখা দেয়।

উসমান জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান এবং ভারতের ক্ষেত্রে—পাকিস্তান ভাটির দেশ এবং ভারত উজানের দেশ। কিন্তু চীন এবং ভারতের ক্ষেত্রে—চীন উজানের দেশ এবং ভারত ভাটির দেশ, বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ‘চীন ভারতের জলও আটকাতে পারে।’

সামরিক সক্ষমতা ও সাইবার যুদ্ধ

গবেষণা সহকারী সৈয়দা মালিহা সেহর ‘রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ’ বিষয়ের ওপর একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পাকিস্তান-চীন সামরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নতুন সক্ষমতার পরিপক্কতা দেখেছি।’

মালিহা আরও উল্লেখ করেন, ভারতীয় নজরদারি এবং যোগাযোগ ধ্বংস করার জন্য তৈরি চীনা-উৎস সিস্টেম মোতায়েন করে পাকিস্তান সরাসরি ভারতীয় এবং পশ্চিমা-সংযুক্ত প্ল্যাটফর্ম উভয়ের প্রযুক্তিগত আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

আরেক তরুণ গবেষক সাফা রেহমাত ‘সাইবার যুদ্ধ এবং ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি’ সম্পর্কে বলেন, ‘এই সংঘাতে সাইবার যুদ্ধের মধ্যে হ্যাকিং, ডেটা লঙ্ঘন এবং ভুল তথ্য প্রচারণা জড়িত। ভারতীয় গবেষণা ও বিশ্লেষণ শাখা ‘র’ এবং আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা (আএসআই), পাশাপাশি উভয় দেশের জনগণই অত্যাধুনিক সাইবার ক্ষমতা বিকাশ করেছে।’

বর্ণনামূলক যুদ্ধ ও কাশ্মীর

‘বর্ণনামূলক যুদ্ধ’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে গবেষণা সহকারী সৈয়দ শাহরিয়ার শাহ বলেন, ধারণাগুলো সংঘাতের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আসল সংঘর্ষ কয়েক দিন স্থায়ী হয়েছিল কিন্তু আমরা বর্ণনা দিয়েই চলছি।

আরেকজন গবেষণা সহকারী আসিফ আলী ‘দ্য কাশ্মীর ফ্ল্যাশপয়েন্ট’ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই কাশ্মীরে দমন-পীড়ন শুরু করেছে। পেহেলগামের ঘটনার পর প্রায় দুই হাজার ৮০০ কাশ্মীরিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে অথবা আটক করেছে। এটি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024