শনিবার, ২১ Jun ২০২৫, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
মাত্র ত্রিশ মিনিটের কাল বৈশাখী ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে মেহেরপুরের আম–লিচু, জমি ফসল, গাছাপালা ও ঘরের টিনের চালা। রাত থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো জেলা। ঝড়ের ছোবলে গাছের আম–লিচু ঝরে পড়েছে প্রচুর পরিমাণে। ভরা মৌসুমে আম–লিচুর এমন ক্ষতিতে দিশেহারা বাগান মালিকেরা। পাশাপাশি মাটির সাথে নুয়ে পড়েছে কলা ও পেঁপের গাছ এবং ক্ষেতের ধান। ভেঙে পড়েছে গাছের ডালপালা। উড়ে গেছে ঘরের টিনের চালা। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা চাষিদের।
মেহেরপুরের চাঁদবিল গ্রামের কৃষক সাজিবুল ইসলাম জানান তার দুই বিঘা জমিতে কলা’র আবাদ ছিল। কয়েকটা দিন পরেই কলা বিক্রি করতেন। কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখেন জমির বেশিরভাগ কলার গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। দাঁড়িয়ে আছে অল্প কিছু গাছ। এখন কলা চাষের খরচটাও উঠবে না। তিনি বলেন– দুই বিঘা জমিতে কলার চাষ করতে খরচ হয়েছিলো দেড় লাখ টাকা। বর্তমান বাজার দরে তিন লাখ টাকার কলা বিক্রি করতে পারতেন। এখন আসলতো দূরের কথা পুরো টাকায় জলে। পরবর্তী আবাদ কিভাবে করবেন তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। কাল বৈশাখী তার সব পুঁজি কেড়ে নিলো। জেলার সদর ও মুজিবনগর উপজেলার অনেক চাষির একই অবস্থা। সবচাইতে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন আম ও লিচু চাষিরা।
চাঁদবিল গ্রামের কৃষক রাশিদুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমিতে ধান ও একবিঘা জমিতে পেঁপের আবাদ ছিলো তার। ধান পেকে উঠেছে। কয়েকদিনের মধ্যে ধান কেটে মাড়াই করতেন। কিন্তু ধানের গাছ জমিতে শুয়ে পড়েছে। এখন ধান কাটলে চিটা হয়ে যাবে। এক বিঘা জমির পুরো পেঁপে গাছও মাঝখান থেকে ভেঙ্গে পড়েছে। কয়েকটি গাছ ভালো রয়েছে। এতে বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়বেন তিনি। তার মত অনেক চাষি এখন চোখে সরষের ফুল দেখছে।
সদর উপজেলার কোলা গ্রামের বাগান মালিক শুভ বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০ লাখ টাকার আম ও লিচুর বাগান কিনেছেন তিনি। যার মধ্যে বেশিরভাগ হিমসাগর আমের বাগান রয়েছে। ১৫ মে থেকে গুটি ও বোম্বাইজাতের আম সংগ্রহ শুরু করেন। আগামী ২২ মে থেকে সুস্বাদু হিমসাগর আম সংগ্রহের কথা ছিলো। শনিবার সন্ধ্যার কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপকহারে ঝরে পড়েছে আম ও লিচু। গাছের ৪০ থেকে ৫০ ভাগই আম শেষ। অন্যদিকে বাগানের অনেক গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়েছে। এখন বাগানের ফল বিক্রি করে টাকা তুলবেন কী করে তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
আমঝুপি গ্রামের আম বাগান মালিক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চলতি মৌসূমে খরার কারণে আগে থেকেই আম পাকা শুরু হয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ থেকে আম সংগ্রহের সময় দিয়েছে অনেক দেরিতে। বিশেষ করে হিমসাগর আম কয়েকদিন আগে থেকেই গাছে পোকতে শুরু করেছে। একটু বাতাস হলে ঝরে পড়ছে। অথচ প্রশাসনের ভয়ে গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে পারছেননা কেউ। এতে লোকসানের মুখে পড়ার শঙ্কা বাগানীদের। তার উপর কালবৈশাখী ঝড়ে সব শেষ করে দিল। এখন কান্না ছাড়া উপায় নেই।
এদিকে সন্ধ্যার ঝড়ে সড়কের পাশের বড় বড় গাছ এবং গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বিভিন্ন স্থানের ঘরের টিন উড়ে গেছে। পাশাপাশি রাত থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিকেল পর্যন্ত শহরের কবয়েকটি জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও গ্রামের বেশিরভাগ জায়গায় এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে জরুরি অনেক কাজই করতে পারছেননা সাধারণ মানুষ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুল আলম বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে কাজ করছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে সোমবারের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে কৃষকেরা বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বেন।
এদিকে কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ