শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
বিসিবি নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেন তামিম ইকবাল বাজেট দ্বন্দ্বে তহবিল বন্ধ, অনির্দিষ্টকালের শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্র দুই জেনারেল এখন মোদির আশ্রয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা জামায়াত নেতা তারেক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম হত্যা তদন্তে মেহেরপুরে ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা ফেসবুকে ভুয়া প্রার্থী তালিকা, বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান রিজভীর অগ্নিসংযোগের দায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপাতে বলেছিলেন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা অর্ধশতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার মাত্র একটি শর্ত মানলে নতুনরাও পাবেন মনিটাইজেশন ভারতের অন্যতম বিশেষত্ব হলো ভুয়া খবর প্রচার: প্রধান উপদেষ্টা

ছয় হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন প্রিমিয়ার ব্যাংকের

বেসরকারি খাতের প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকটি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখার তথ্যও আড়াল করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে বেরিয়ে এসেছে এমন ভয়ানক জালিয়াতি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে প্রধান কার্যালয়সহ বড় শাখাগুলোর খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনের তথ্য যাচাই করা হয়। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২০২৪ সালভিত্তিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি দল সরেজমিন কয়েকটি শাখার অফসাইট প্রতিবেদনের আলোকে রিপোর্ট প্রস্তুত করে। এতে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণের তথ্য পাঠিয়েছে এক হাজার ৬১১ কোটি টাকা। তবে ওই সময়ে ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ ছিল সাত হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। এর মানে খেলাপি ঋণ গোপন করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দলের প্রতিবেদন এবং ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে আসে।

পাশাপাশি গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে জানিয়েছে ৭৮৫ কোটি টাকা প্রভিশন উদ্ধৃত্ত রয়েছে। তবে ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিসেম্বর শেষে নিয়মিত ঋণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের ছয় হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা প্রভিশন রাখার কথা ছিল। ব্যাংক রাখতে পেরেছে মাত্র এক হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি হলেও তারা দেখায়নি। উল্টো ৭৮৫ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত দেখিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক পাঁচ হাজার ৪৩১ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতির তথ্য আড়াল করেছে। ডিসেম্বরভিত্তিক ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ার কারণে এক বছরের জন্য ডেফারেল (অতিরিক্ত সময় বা বিলম্বের অনুমতি) সুবিধা নেয়।

গত পাঁচ বছরের খেলাপি ঋণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালেই ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০২২ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৬৭ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল ৬৮১ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ৫৩৫ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৫১ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা যায়, প্রিমিয়ার ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখার বিশাল অঙ্কের ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এসব ঋণ এতদিন ব্যাংক লুকিয়ে রেখেছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন কিছু না বললেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর এসব ঋণ খেলাপি করতে নির্দেশ দেয়। যদিও ব্যাংক এসব ঋণ খেলাপি করতে নারাজ ছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে খেলাপি করতে বাধ্য হয় ব্যাংক। ফলে হঠাৎ করে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ শাখার ঋণগুলো খেলাপি করার নির্দেশ দিলেও ব্যাংক তা করতে রাজি ছিল না। এ জন্য ব্যাংক নির্ধারিত সময় বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেনি। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, পরবর্তী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হয়। তবে এবার অনেক ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারায় এক মাস সময় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৩১ মে সেই সময়সীমা শেষ হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রিমিয়ার ব্যাংকে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই সম্প্রতি ঋণগুলো খেলাপি হিসেবে দেখিয়ে চলতি মাসে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে গত বছর ব্যাংকের মুনাফাও কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যাংকের নিট মুনাফা হয় ১৪৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে মুনাফা হয়েছিল ৪৩৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা ২৮৯ কোটি টাকা কমেছে। ২০২২ সালে নিট মুনাফা ছিল ৪০৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ৩২৬ কোটি এবং ২০২০ সালে ২০৬ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে সবচেয়ে কম মুনাফা হয়।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি আরো বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাস শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ শতাংশ। এসব ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য আট হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

মার্চ শেষে ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ১৬ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতির প্রভাবে ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতিতেও পড়েছে। মার্চ শেষে মূলধন ঘাটতি ছিল এক হাজার ১৭১ কোটি টাকা। জুনে তা আর বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করার বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরকে মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বিস্তারিত হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024