সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:২৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
মেহেরপুর জেলা কর্ণধার কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে মেহেরপুরে পাঁচ দফা দাবিতে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের শিক্ষকদের মানববন্ধন মেহেরপুরে কাল বৈশাখীর হানা,  ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি কৃষি ও প্রবাসী আয়ই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড – মনির হায়দার এনসিপির যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’র আত্মপ্রকাশ বিপ্লবের পর আশাবাদের বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন নেই ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ: পাকিস্তানের প্রশংসা করে যা বলল চীন আকাশে খুলে গেল চাকা, যাত্রী নিয়ে শাহজালালে নিরাপদে অবতরণ বিমানের মসজিদ-মাদরাসাসহ ৩৫০ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিলো ভারত যৌক্তিক দাবি মেনে নিলে ২ মিনিটে ক্যাম্পাসে ফিরবো: শিক্ষক সমিতির সম্পাদক

ভারত-পাকিস্তান ‘পানি যুদ্ধ’

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পানি নিয়ে বিতর্ক ঐতিহাসিক ও জটিল এক বিষয়। প্রতিবেশী এই দুই দেশের সম্পর্ক যখন নতুন করে উত্তপ্ত, তখন আবার সামনে এসেছে বহু পুরনো এই প্রশ্ন।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের লক্ষ্য করে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ক্ষুব্ধ ভারত সরকার প্রতিশোধমূলক একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তটি হলো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত বা প্রত্যাহার।

অপরদিকে পানি চুক্তি স্থগিতকে পাকিস্তান ‘পানি যুদ্ধ’ ঘোষণার শামিল হিসেবে বর্ণনা করে তারাও পাল্টা কয়েকটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে একেবারে তলানিতে নিয়ে ঠেকিয়েছে।

সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভারত পানি চুক্তি স্থগিত করায় চাষাবাদ, জীবিকা, নগরজীবন টিকিয়ে রাখা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দিক থেকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে পাকিস্তান।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি হয় ১৯৬০ সালে। গত ৬৫ বছর এই পানি চুক্তিকে একাধিক সংঘাতে লিপ্ত পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে একটি বিরল কূটনৈতিক সাফল্যের গল্প হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এই সময়ে দুই দেশের মধ্যে অনেক টানাপোড়েন হলেও সিন্ধুর পানি এভাবে বন্ধ করার ঘোষণা আসেনি কখনও।

তবে ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার’ অভিযোগ করেছে। ইসলামাবাদ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

ভারত বলছে, সন্ত্রাস না থামা পর্যন্ত চুক্তিটি ‘স্থগিত’ রাখা হবে এবং সীমানা পার হয়ে আসা সন্ত্রাসীদের জন্য চিরদিনের একটি শিক্ষা হয়ে থাকবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দুই দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংকটের বার্তা। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পানি নিয়ে বিতর্ক এখন পানি যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

তবে এই চুক্তিকে ঘিরে সীমান্তের উভয় পক্ষের বিশেষজ্ঞরা একমত যে, গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর স্থগিতাদেশ পানির ওপর তাৎক্ষণিক কিছু প্রভাব ফেলবে।

সিন্ধু নদী এশিয়ার দীর্ঘতম নদীগুলোর মধ্যে একটি, যা বিতর্কিত মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অতি-সংবেদনশীল সীমানা রেখা অতিক্রম করেছে। এটি একটি হিমালয় অঞ্চল যা উভয় দেশই সম্পূর্ণরূপে দাবি করে।

সিন্ধু পানি চুক্তিতে কী আছে?

অনেক বছরের আলোচনার পর ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় চুক্তিটি সিন্ধু নদীর বেসিনে পানি সরবরাহকারী ছয়টি উপনদীর ‘ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার’ নিশ্চিত করেছিল। পানির বিষয়টি উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। শুষ্ক পাকিস্তানের জন্য, পানি ব্যবহার এবং কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চুক্তির অধীনে, ভারত তিনটি পূর্ব সিন্ধু উপনদী— রবি, শতদ্রু ও বিয়াস— সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করবে বলে সম্মত হয়েছিল। সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এগুলো ব্যবহারের সীমাহীন অধিকার ভারতের রয়েছে।

অন্যদিকে তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী— চেনাব, ঝিলম ও সিন্ধু— পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে ভারত জলবিদ্যুতের মতো অ-ভোগ্য ব্যবহারের জন্য এগুলো ব্যবহার করতে পারে।

স্থগিতাদেশের কী প্রভাব আছে?

ভারত-ভিত্তিক সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যামস, রিভারস অ্যান্ড পিপলের সমন্বয়কারী হিমাংশু ঠক্কর বলেছেন, স্বল্পমেয়াদে, এর সরাসরি কোনো বাস্তব প্রভাব নাও থাকতে পারে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যা ঘটছে তার বাইরেও জল সরানোর জন্য যেকোনো নিরাপদ অবকাঠামো তৈরি করতে বছরের পর বছর সময় লাগে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক দশকেরও বেশি সময় লাগে। ভারতের বিদ্যমান বাঁধগুলোর পানি আটকে রাখার বা অন্য দিকে সরানোর ক্ষমতা নেই।

পাকিস্তানের পানি বিশেষজ্ঞ হাসান আব্বাস বলছেন, ভারত এই নদীগুলোর প্রবাহ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে পারে না, কারণ এটি প্রযুক্তিগতভাবে অকার্যকর এবং অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়।

চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। কিন্তু ঠক্কর যুক্তি দিয়েছেন, এটি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বছর ধরে ‘কমবেশি অচলাবস্থায়’ ছিল।

ভারত কেন এটি স্থগিত করল? 

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রবীণ দোন্থি বলেন, জনসাধারণ প্রতিশোধ চাইছিল, কিন্তু সেই সামরিক প্রতিশোধ নিতে সময় লাগে। এতে এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে, কিন্তু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন ছিল।

দোন্থি বলেন, ভারতীয় জনগণ এটিকে ‘পাকিস্তানের ওপর আরোপিত একটি সম্মিলিত শাস্তি’ হিসেবে দেখবে।

২০১৬ সালে ভারত শাসিত কাশ্মীরে এক হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি সেই সময় বলেছিলেন, রক্ত এবং পানি একসাথে প্রবাহিত হতে পারে না।

এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী?

দীর্ঘমেয়াদে উভয় দেশের জন্য পানি ব্যবস্থাপনার চিত্র আরও জটিল হয়ে ওঠতে পারে।

ভারতের নতুন করে যেকোনো বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ বা পানি আটকে রাখার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। সিন্ধু বেসিন থেকে পানি সরিয়ে ভারতের অন্যান্য অংশে পাঠানোর ধারণাটি অবকাঠানো নির্মাণ ও জ্বালানির বিশাল খরচ দিক বিবেচনায় খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।

এছাড়া ভারত নিজেই ব্রহ্মপুত্র ও অন্য নদীগুলোর নিম্নপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত। এসব নদী চীন থেকে উৎসারিত হয়ে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। এই বাস্তবতা ভারতের নিম্নপ্রবাহে থাকা অন্যান্য দেশের অধিকার সুরক্ষার কবচ বলা যেতে পারে।

ফলে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের মাধ্যমে একতরফা কোনো উদ্যোগ নিলে সেটি ভারতের জন্য বিশ্বে একটি খারাপ নজির স্থাপন করবে, যা একদিন তার বিরুদ্ধেই ব্যবহার হতে পারে।

অন্যদিকে সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাবের প্রবাহ পাকিস্তানের কৃষি, শহর-নগর এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভিত্তি। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের কাছে এসব নদীর পানির কোনো বিকল্প নেই। ফলে ভারত বিঘ্ন সৃষ্টি করতে চাইলে পাকিস্তানের জন্য তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এমনকি পানির ব্যবস্থাপনা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়তে পারে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024