সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
কাতারের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ও দেশ পুনর্গঠনে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আরব বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ এ দেশটি।
একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ-কাতার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি। চার দিনের কাতার সফরের শেষ দিনে গতকাল সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
দোহায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ড. ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি। বৈঠকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে কাতারের পূর্ণ কূটনৈতিক, আর্থিক ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। জবাবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও দেশ পুনর্গঠনের কাজে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।
বড় স্বপ্ন দেখার আহ্বান ড. ইউনূসের : গতকাল সকালে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ শিরোনামে এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা প্রদান করেন। সেখানে তিনি তরুণ প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম অভিহিত করে শিক্ষার্থীদের কল্পনা করতে, বড় স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেন। অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ‘তিন শূন্য’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ) ভাবনার কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের তিন শূন্য মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করার পরামর্শ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাই, তখন খুবই স্বস্তি বোধ করি। আমি নিজেকে তরতাজা অনুভব করি। তোমরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। আমি আন্তরিকভাবে তা বিশ্বাস করি। তোমরাই সুপারম্যান আর সুপারওম্যান। এমন কিছু কোরো না যা ধনসম্পদের কেন্দ্রীকরণে অবদান রাখে। বরং কল্পনা করো এবং স্বপ্ন দেখো এমন একটি নতুন পৃথিবী গড়ার, যেখানে আত্মবিধ্বংসী পদ্ধতির কোনো স্থান নেই। ’
ফায়ারসাইড চ্যাটে যোগদান : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল দোহায় ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথোপকথন : একটি রূপান্তরিত বিশ্বে যুব নেতৃত্বকে শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক একটি ফায়ারসাইড চ্যাটে যোগ দেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মিডলইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স এবং জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র হানা এলশেহাবি। এ ছাড়া কাতারে বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে মিলিত হন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সফরের চতুর্থ দিনটি ছিল অত্যন্ত সফল একটি দিন। তিনি সকালেই চলে যান কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুবসমাজের সামনে তাঁর (প্রধান উপদেষ্টা) থ্রি জিরো নিয়ে যে ভিশন সেটা তুলে ধরেছেন। সেখান থেকে ফিরে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। দুজনের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। কাতার পুরো আরব দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী। তাদের থেকে অনেক ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা কাতারের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, বিনিয়োগ সমর্থন চেয়েছেন। কাতারের প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রেস সচিব বলেন, গত চার দিনে কাতারে এমন কোনো শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি নেই যার সঙ্গে ড. ইউনূসের দেখা হয়নি। কাতারে যারা ব্যবসা করেন তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বুধবার সিরিজ বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাদের সামনে নতুনভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে। পুরো অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানানো ড. ইউনূসের অন্যতম লক্ষ্য।