বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
সজিব ওয়াজেদ জয়সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন সীমান্তে হত্যাকাণ্ডে নিন্দা জানিয়ে যা বললেন জামায়াত আমির ট্রাইব্যুনালে ডেকে আনার পর ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা সারের দাম বেশি নেয় ডিলার, না দেখার ভান কৃষি কর্মকর্তার সার না পেয়ে কৃষি কর্মকর্তার দাঁত ভেঙে দিলেন কৃষক পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার মেহেরপুর মুজিবনগরে যৌথবাহিনীর অভিযানে বিদেশি অস্ত্রসহ ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আটক বিএসএফের উচ্চক্ষমতার সার্চলাইটে কৃষিতে সর্বনাশ জরুরি ভিত্তিতে জেড আই খান পান্নাকে ট্রাইব্যুনালে তলব

ট্রাইব্যুনালে ডেকে আনার পর ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না

গুমের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে এগিয়ে গিয়েও পিছু হটার ব্যাখ্যা দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডাকা হলো জেড আই খান পান্নাকে। হাজির হয়ে আদালতের কাছে ক্ষমা চাইলেন তিনি। শুনানিতে কথা বলতে গিয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের ধমকও শুনতে হলো জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীকে।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুম করে রাখার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ অভিযোগ গঠনের শুনানিতে এসব ঘটে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা। পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে গত ২৩ নভেম্বর জেড আই খান পান্নাকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এই আইনজীবীও আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষে দাঁড়াতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানান, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে তিনি থাকতে চান না।

আজ মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন জেড আই খান পান্না উপস্থিত ছিলেন না। তা দেখে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হতে তিনি একসময় আগ্রহী ছিলেন, এখন কেন আগ্রহী নন? এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রাইব্যুনালের সামনে তাঁকে ব্যাখ্যা করতে হবে।

আদালতে উপস্থিত চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তখন বলেন, জেড আই খান পান্নার মক্কেল শেখ হাসিনা ট্রাইব্যুনালের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। যে কারণে তিনিও আগ্রহী নন। এটা আদালত অবমাননার শামিল।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, জেড আই খান পান্নাকে ফোন করে এখনই আসতে বলুন অথবা লোক পাঠান। এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, জেড আই খান পান্নার চেম্বারে ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে পাঠান। চেম্বারে গিয়ে বলে আসুক আসতে।

কিছুক্ষণ পর হুইলচেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন জেড আই খান পান্না। তখন ট্রাইব্যুনাল তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চান। জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, তিনি সুস্থ নন। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান না।

সরে দাঁড়ানোর আরও কারণ ব্যাখ্যা করে এই আইনজীবী বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হওয়ায় তাঁর অনুসারীরা তাঁকে আক্রমণ করছেন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকেও আক্রমণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি ‘স্যান্ডউইচ’ হয়ে গেছেন।

তারপর ট্রাইব্যুনাল অসন্তোষের সুরে বলেন, আসামি আসবে না, আপনারাও আসবেন না, যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তাঁদের নিয়ে কথা বলা হবে।

এ পর্যায়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন জেড আই খান পান্না। তারপর ট্রাইব্যুনাল গুমের দুটি মামলায় জেড আই খান পান্নার পরিবর্তে মো. আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন।

আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালে এর আগে জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের সেই মামলায় ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

এদিকে শুনানিতে জেড আই খান পান্নার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর আসামি ট্রাইব্যুনালের শ্রদ্ধাশীল নয় বলে তিনি (পান্না) মামলা লড়বেন না, এটা আদালত অবমাননা। আবার তিনি বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের হয়ে এই ট্রাইব্যুনালে লড়তে চান। তিনি ট্রাইব্যুনালকে যা–তা মনে করেন।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, জেড আই খান পান্না বলতে পারেন না যে তাঁর ‘ক্লায়েন্ট’ (শেখ হাসিনা) যা মানেন না, তিনি সেখানে যাবেন না। তিনি ট্রাইব্যুনালের চেয়ে ক্লায়েন্টকে (শেখ হাসিনা) বড় মনে করেন কি না?

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, জেড আই খান পান্না অসুস্থ হলে সেটা বিবেচনায় নেওয়া হবে। বিচারক ও রায়কে সমালোচনা করা যাবে। কিন্তু আদালত মানবেন না, আইন মানবেন না, এটা আশা করা যায় না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘আপার হেন্ড’ (ঊর্ধ্বে অবস্থান) দিয়েছে সংবিধান।

এই পর্যায়ে জেড আই খান পান্না কিছু একটা বলতে যান। তখন পান্নার উদ্দেশে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল বলে ওঠেন, ‘মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ’। যা খুশি তা বলা যাবে না।

তখন জেড আই খান পান্না বলেন, যা খুশি তা তো তিনি বলেননি।

এই পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আইন অনুযায়ী কথা বলবেন। রাজনীতির মঞ্চে যা কিছু বলা যায়, কিন্তু আইনজীবী হিসেবে তা বলতে পারেন না।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved Meherpur Sangbad © 2025