মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন
জুলুম নির্যাতন আর অপরাজনীতির কারণে ৫ আগস্ট দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের রাজনীতির মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। এখন যারা খুনি আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে, তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি–যারা লীগের রাজনীতি পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে জনগণ তাদেরকেও প্রত্যাখ্যান করবে।
বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগ, ভারতপন্থী, মুজিববাদী রাজনীতি চলবে না। আওয়ামী লীগের নামে আর কোনো রাজনীতি কেউ করতে পারবে না। এ দেশে চলবে বাংলাদেশপন্থীদের রাজনীতি, ইসলামের রাজনীতি। যারা দিল্লির এজেন্ডা চাপিয়ে দিতে চাইবেন, তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।
গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খুনি হাসিনার পতনের প্রথম বার্ষিকীতে ‘জাতীয় মুক্তি দিবস’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত গণ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী এসব কথা বলেন। সমাবেশ পূর্ব বিশাল মিছিলটি সকাল ১০টায় পিরোজপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর সুপ্রীম কোর্ট থেকে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলামের বেকসুর খালাসপ্রাপ্তির পর একথা প্রমাণিত হয়েছে যে জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিল সম্পূর্ন মিথ্যা ও সাজানো নাটক। যারা বিচারের নামে এই মিথ্যা সাজানো নাটকের জড়িত থেকে নিরীহ-নির্দোষ মানুষদের হত্যা করেছে, ফাঁসি দিয়েছে সেই বিচারপতি, প্রসিকিউটরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করার দায়ে তাদেরকে আইন অঙ্গন থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
মাসুদ সাঈদী বলেন, সংবিধানের ৪৭-অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। খুনি শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নাই। ছাত্র, যুবক, আলেমসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যার দায়ে খুনি হাসিনাকে সকল শহীদ ও মজলুম পরিবারের সদস্যদের সামনে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতে হবে। শেখ হাসিনার ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনো বিচার দেশের জনগণ মানবে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার গত ১৫ বছরে জেল জুলুম অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী মতের দল ও মতের মানুষদেরকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশকে স্বৈরাচারমুক্ত একটি সুখী সমৃদ্ধশালী গনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী গত ১৫ বছর সকল জুলুম নির্যাতন সয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছে। একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র গঠনের জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সেই আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এই জাতির জীবনে ৫ই আগস্ট এসেছে। ৫ই আগস্ট এসেছে বাংলাদেশকে নতুন করে বিনির্মাণের জন্য। যারা এখনো মনে করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ঢুকে পড়বে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ গত ৫৩ বছরে অনেক মত-পথ, নেতা-নেত্রী দেখেছে। এবার দেশের মানুষ জামায়াতকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। একটি স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখতে চায়। জামায়াত যাতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে না পারে তাই ফ্যাসিষ্টদের মতো কেউ কেউ আবারো রাজাকার রাজাকার খেলা শুরু করেছে। গত ১৫ বছর রাজাকারের ব্যবসা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ তার পুজিপাট্টা, আমছালা সব হারিয়ে এখন ভারতে। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি এখন আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পথ ধরে রাজাকার রাজাকার ব্যবসা শুরু করছে। তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো, এই ব্যবসা কইরেন না। এই ব্যবসা লসের ব্যবসা। এই ব্যবসা দেশের মানুষ পছন্দ করেনা। এই ব্যবসায় আপনাদেরও আমছালা সব যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশ সূরা সদস্য ও পিরোজপুর জেলা শাখার আমির বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেনে ফরিদ। আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের পিরোজপুর জেলা শাখার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব, জেলা সেক্রেটারি জহিরুল হক, পিরোজপুর জেলা অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি শেখ আব্দুর রাজ্জাক, পিরোজপুর পৌর আমি মাওলানা ইসহাক আলী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পিরোজপুর জেলা শাখার সভাপতি ইমরান হোসেন। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের পিরোজপুর জেলা শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।