Editor Panel
- ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ / ৩১ Time View
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ ও গঠনকে বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা লিভ টু আপিল আবেদনের ওপর আজ আদেশ দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ ঘোষণা করবেন।
এর আগে বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স এবং মতামত প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ আদেশের দিন ধার্য করেন।
এদিন লিভ টু আপিলের পক্ষে আপিলকারী সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজে শুনানি করেন। অন্যদিকে ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হওয়া লেখক ফিরোজ আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। ইন্টারভেনার হয়ে আরও শুনানি করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টারা শপথ নেন।
এই প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স ও মতামত প্রক্রিয়া নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী মহসিন রশিদ।
আবেদনের যুক্তিতে তিনি বলেন, যে বিষয় (অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) সংবিধানে নেই, সে বিষয়ে রেফারেন্স চাওয়া যায় না। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুসরণ করতে হয়, কিন্তু তা করা হয়নি।
সেই রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে পরে তিনি লিভ টু আপিল করেন।
রিট খারিজের আদেশে হাইকোর্ট বলেছিলেন, এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেছেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাই এটি আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছার সমর্থনপুষ্ট।
আদালত আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ এবং আগামী বহু বছর জনগণ তা স্মরণে রাখবে।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার’-এর কথা বলা আছে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির কাছে যদি মনে হয় জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো আইনি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে বা হতে পারে এবং এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া প্রয়োজন, তাহলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের কাছে পাঠাতে পারবেন। আপিল বিভাগ উপযুক্ত শুনানির পর রাষ্ট্রপতিকে মতামত জানাতে পারবেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গঠন ও শপথের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১০৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান।
রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্স (১/২৪) অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। তাতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারবেন এবং তাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।
এর আগে, গত ১২ নভেম্বর শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। শুনানিতে আদালত সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় আইনজীবী মহসিন রশিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন অ্যাটর্নি জেনারেল। পরে, আদালত সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় আইনজীবী মহসিন রশিদের কাছে ব্যাখ্যা চান আপিল বিভাগ।
গত বছরের ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন এই আইনজীবী। পরে রিট খারিজ করে হাইকোর্ট বলেন, দেশের জনগণ বৈধতা দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। পরে তিনি আপিল বিভাগে আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।