শুক্রবার, ১১ Jul ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

গ্রুপ চ্যাটে যুদ্ধের গোপন তথ্য ফাঁস, মার্কিন নিরাপত্তা নিয়ে নতুন বিতর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি সিগন্যাল গ্রুপ চ্যাটে সামরিক অভিযান–সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য বিনিময়ের ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান হামলার সময়, লক্ষ্যবস্তু এমনকি হামলার ধরনও শেয়ার করা হয়। হোয়াইট হাউস শুরুতে দাবি করেছিল, এসব তথ্য গোপন নয়। তবে দ্য অ্যাটলান্টিক যখন পুরো চ্যাট প্রকাশ করে, তখন বিষয়টি নতুন মাত্রা পায়।

সিএনএনের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই চ্যাটে যে তথ্য দেন, তা ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হামলার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। এমনকি চ্যাটের নামেও ‘হুতি’ শব্দটি ছিল। যদিও হোয়াইট হাউস ও হেগসেথ বারবার বলে এসেছেন, এসব বার্তা শুধু সংবেদনশীল, গোপন নয়।

তবে সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক বেত স্যানার এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মার্ক কিমিট ভিন্ন মত পোষণ করেন।

স্যানার বলেন, যদি কোনো তথ্য খোলা ই–মেইলে পাঠাতে কেউ রাজি না হন, তাহলে তা গোপনীয়ই ধরা হয়। তার বক্তব্য, ‘যদি মস্কো বা বেইজিংয়ের হাতে এমন কোনো তথ্য পড়ে এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল প্রকাশ পায়, তাহলে সে তথ্য স্পষ্টতই গোপনীয়। ’ 

কিমিট বলেন, মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এমন তথ্য আদৌ কি প্রকাশ হওয়া উচিত ছিল? তার উত্তর, অবশ্যই না। এমন তথ্য গোপনীয় হওয়া উচিত।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, যুদ্ধ পরিকল্পনা অনেক সময় সম্ভাব্যতা–নির্ভর, কিন্তু যখন তা বাস্তব অভিযানে রূপ নেয়, তখন তা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। 

স্যানার আরও বলেন, সিগন্যাল অ্যাপে চ্যাট করাই সমস্যা নয়, কিন্তু যখন সেই চ্যাটে হেগসেথ ও সিনেটর ভ্যান্সের মতবিরোধ দেখা যায়, তখন শত্রুদের কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত কীভাবে হয়—বা আদৌ হয় কি না—তা প্রতিপক্ষ বুঝে ফেলে। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স চ্যাটে হামলার যৌক্তিকতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, যা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত পৌঁছায়নি।

হোয়াইট হাউস দাবি করছে, এটি যুদ্ধ পরিকল্পনা নয়, তাৎক্ষণিক আক্রমণের আলোচনা।

কিন্তু কিমিট বলেন, এটা শব্দের খেলা নয়। বাস্তব অভিযান সবসময়ই বেশি সংবেদনশীল। 

ডেমোক্র্যাট নেতারা দাবি করেছেন, এমন চ্যাট মার্কিন সেনাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে। যদিও কিমিট বলেন, সিগন্যাল নিরাপদ অ্যাপ এবং অভিযানে ক্ষতি হয়নি। তবে তিনি সতর্ক করেন, ভুল স্বীকার করে সংশোধন করাই শ্রেয়। অস্বীকার করলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।

স্যানারের মতে, এমন সংবেদনশীল যোগাযোগ সরকারি ও সুরক্ষিত চ্যানেলেই হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং আমাদের জন্য শিক্ষা। আমাদের যোগাযোগব্যবস্থা এমন হতে হবে, যাতে শত্রুরা জানতে না পারে আমরা কী করছি বা কীভাবে করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024