সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
কাশ্মীরের পাহেলগামে ভয়াবহ হামলার প্রেক্ষিতে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ছয় দশকের পুরোনো সিন্ধু নদের পানিচুক্তি স্থগিত ঘোষণা করার পর অঞ্চলজুড়ে বাড়ছে উত্তেজনা। পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে এবং প্রয়োজনে ‘পূর্ণ সামরিক শক্তি, এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথাও বিবেচনায় আনা হতে পারে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকেরা।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি (এনএসসি) বৃহস্পতিবার এক বৈঠকের পর জানায়, ‘পানি আমাদের ২৪ কোটির মানুষের জীবনরেখা। কেউ যদি সিন্ধু নদের চুক্তি লঙ্ঘন করে পানি থামাতে বা গতি পরিবর্তন করতে চায়, সেটিকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে ধরা হবে এবং তার জবাব দেওয়া হবে জাতীয় শক্তির সম্পূর্ণ পরিসর দিয়ে।’
ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের কৃষি-নির্ভর অর্থনীতির জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে। কারণ পাকিস্তানের প্রায় ৯০% কৃষিকাজ সিন্ধু নদের পানির ওপর নির্ভরশীল।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে, ভবিষ্যতে হাইড্রো প্রকল্প ও বাঁধ নির্মাণে গতি বাড়ানো হতে পারে, যেমন—পাকাল ডুল, রাটলে, কিরু ও সাওয়ালকোট। এতদিন পাকিস্তানের আপত্তিতে এই প্রকল্পগুলো আটকে ছিল।
পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত?
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত যদি পাকিস্তানের পানির প্রবাহ থামাতে কোনো জলাধার বা বাঁধ নির্মাণ করে, তাহলে পাকিস্তান সেই স্থাপনাগুলো ‘পুরো যুদ্ধ শক্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেবে’। কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে ‘সম্পূর্ণ জাতীয় শক্তির ব্যবহার’ কথাটির অর্থ—পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বলছেন, ‘যদি ভারত কোনও জলাধার বা বাঁধ তৈরি করে যা পাকিস্তানের পানির অধিকার হরণ করে, তাহলে পাকিস্তান সামরিক শক্তি দিয়ে তা ধ্বংস করবে— এমনকি তা পরমাণু হামলা করে হলেও।’
আরেকজন বিশ্লেষক আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘যেহেতু পানি আমাদের জাতীয় স্বার্থের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এক মুহূর্ত দেরি না করেই পদক্ষেপ নেবে এবং সেই স্থানে হামলা করবে যা পাকিস্তানের পানি সরবরাহকে বিপন্ন করে।’
ভারতের রাজনৈতিক চাল?
পাকিস্তানের সাবেক সিন্ধু পানি কমিশনার জামাত আলী শাহ মনে করেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক কৌশল ও জনমত শান্ত করার একটি প্রচেষ্টা’। কারণ চুক্তি অনুযায়ী, এটি একতরফাভাবে বাতিল বা স্থগিত করা সম্ভব নয়। যেকোনও পরিবর্তনের জন্য দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতি প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ‘এই চুক্তি স্থায়ী এবং কোনও একপক্ষের সিদ্ধান্তে এর অবসান ঘটানো যাবে না।’
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ‘স্থগিত’ শব্দটি ব্যবহার করেছে ‘বাতিল’ নয়— যা ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাংকের সামনে একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ভারতের দাবি, পাকিস্তান যদি তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করে, তাহলে চুক্তি আবার কার্যকর হতে পারে। সূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন